Logo

বিশেষ সংবাদ

যানজট নিরসনে ব্যাটারিচালিত রিকশায় শৃঙ্খলা আনছে বগুড়া পৌরসভা

Icon

জুয়েল হাসান, বগুড়া

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:১১

যানজট নিরসনে ব্যাটারিচালিত রিকশায় শৃঙ্খলা আনছে বগুড়া পৌরসভা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

যানজটের নিত্য ভোগান্তি কমাতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে বগুড়া পৌরসভা। শহরের সব ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা এখন চলবে দুটি রঙে বিভক্ত হয়ে-একদিন চলবে লাল রঙের, পরদিন সবুজ রঙের।

উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবসায়িক শহর বগুড়া আয়তনে ছোট হলেও আশপাশের ছয় জেলার হাজারো মানুষ প্রতিদিন এখানে আসা–যাওয়া করেন। এতে যানবাহনের চাপ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা ও রাস্তায় অবৈধ পার্কিং। ট্রাফিক পুলিশের স্বল্পতা ও জনসচেতনতার অভাবে যানজট এখন শহরবাসীর নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বগুড়া শহরে অর্ধলক্ষাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চললেও, শহরের ২০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশাকে শৃঙ্খলায় আনতে রঙভিত্তিক সেই সিদ্ধান্তে পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ডের ৮,৬৭৪ জন মালিক সাড়া দিয়েছেন। ইতিমধ্যে গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) থেকে ওয়ার্ডভিত্তিক নম্বর ও রং কোড দেওয়ার কাজ শুরু করেছে পৌরসভা।

এ উদ্যোগকে ঘিরে পৌরসভা ও পৌরসভার বাইরের অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ দেখছেন এটি ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে, আবার কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সম্ভাব্য অসুবিধা নিয়ে।

পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা শাহজাহান আলম রিপন বলেন, “২১টি ওয়ার্ডের ৮,৬৭৪ জন চালকের তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি। রিকশার রং করার কাজ চলছে, প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ক্রমে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।”


পৌরসভার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বাপা বগুড়া শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফজলে রাব্বি ডলার বলেন, “এই উদ্যোগটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হলে যানজট অনেকটা কমবে। তবে এটি যেন কাগজে–কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।”

রিকশা চালক শাহীন বলেন, “ফ্রি রেজিস্ট্রেশন ভালো উদ্যোগ। তবে বাইরে থেকে যারা আসে, তারা যেন শহরে ঢুকতে না পারে-সেটা কঠোরভাবে দেখা দরকার।”

অটোরিকশা চালক আবু সাঈদ বলেন, “সবাই নিয়ম মানলে যানজট কমবে, কিন্তু আমাদের চলাচলে যেন বাধা না হয়।”

বগুড়া পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের শামীম হাসান বলেন, “শুনেছি, গাড়ি রং করে দেবে, আর একদিন পরপর রঙ অনুযায়ী চালকরা গাড়ি চালাতে পারবে। সেটা কি করে সম্ভব? একদিন গাড়ি না চালালে আমরা খাব কী? আমাদের কিস্তি আছে- সে টাকা কোথা থেকে দেবো? এতে আমাদের অসুবিধাই বেশি হবে।”

২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও অটোরিকশা চালক সৈকত হাসান বলেন, “গাড়ি না চালাতে পারলে তো আমাদের সংসার চলবে না। যদি বলে আজ চালাতে পারবো, কাল পারবো না-তাহলে সমস্যা হবে। পরের দিন কে খাবার দেবে? আমাদের সংসার চলে এই রিকশার আয়ে।”

কাহালু উপজেলা থেকে আসা চালক শফিকুল ইসলাম বলেন, “কাহালু থেকে এসে বগুড়ায় গাড়ি চালাতে যদি না দেয়, তাহলে আমরা কীভাবে চালাব? আমাদের কিস্তি আছে। রিকশা না চালাতে পারলে কিস্তির টাকা দেবো কীভাবে, আর খাব কীভাবে? বগুড়ায় গাড়ি চালাতে না দিলে কোথায় চালাব?”

অটোরিকশা ব্যবসায়ী সবুজ ইসলাম বলেন, “অনেকে ব্যবসার জন্য একাধিক রিকশা কিনেছেন। যদি একজনকে একটির বেশি পারমিট না দেওয়া হয়, তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।”

পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার উপপরিচালক মাসুম আলী বেগ বলেন, “এখন শুধুমাত্র পৌরসভার বাসিন্দারাই এই সুবিধা পাবেন। বাইরের চালকদের বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আপাতত একজন মালিক একটি আইডিতে একটি রিকশারই পারমিট পাবেন।”

ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. সালেকুজ্জামান বলেন, “রঙভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে যানজট অনেকটাই কমে আসবে। পাশাপাশি ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে, তাহলেই শৃঙ্খলা টেকসই হবে।”

  • এমআই
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর