Logo

বিশেষ সংবাদ

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নতুন সংকট

Icon

এম. ইসলাম

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৭

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নতুন সংকট
  • গণভোটের সময় নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াত এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন
  • শেষ সময়ে দফায় দফায় অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ঐকমত্য কমিশনের
  • শেষ সময়েও রাজনৈতিক দলে বিভাজন
  • সনদের বাস্তবায়নের স্পষ্ট প্রক্রিয়া দেখতে পারব বলে আশা করছি -এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল
  • গণভোটসহ মৌলিক বিষয়ে স্পষ্ট পদ্ধতি না থাকলে অনেকে স্বাক্ষর করবে না -সারোয়ার তুষার, এনসিপির যুগ্ম-আহ্বায়ক

উচ্চকক্ষে পিআর এবং নির্বাচনের আগে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে বিএনপির অবস্থানের বিপরীত মেরুতে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-সহ কয়েকটি দল। এ দুটি বিষয়ে বিএনপি ছাড় না দিলে জামায়াত, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল শেষ পর্যন্ত জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না। ফলে, দলগুলোর স্পষ্ট এ বিভাজনে শেষ পর্যন্ত ঝুলে যেতে পারে সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। তাই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে সংকট তৈরি হতে পারে।

গতকাল সোমবারও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পিআর বাস্তবায়নের বিষয়টি আগামী সংসদের উপর ছেড়ে দিতে হবে।

অপরদিকে, একই দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জামায়াত ইসলামী নায়েবে আমির ড. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। দলটি জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট চায়। এছাড়া পিআর পদ্ধতিতে ভোটের প্রস্তুতি নিতে ইসিকে আহ্বান জানান।

যদিও উল্লেখযোগ্য অমীমাংসীত বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করছে কমিশন। দুই-একদিনের মধ্যে দলগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছানোর ইতিবাচক খবরও আসতে পারে।

এ বিষয়ে সমাঝোতার জন্যই আগামীকাল ১৫ অক্টোবর জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের তারিখ পরিবর্তন করে দু'দিন পেছানো হয়েছে।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র বলছে, রোববার দুপুরে জাতীয় সংসদে এলডি হলে কমিশনের নিজস্ব কার্যালয়ে কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে উচ্চকক্ষে পিআর থেকে নোট অব ডিসেন্ট প্রত্যাহার এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজনে ইতিবাচক হতে অনুরোধ করা হয় সালাহউদ্দিন আহমদকে। কিন্তু তিনি দলটির আগের অবস্থানে অনড় ছিলেন।

এর আগে শনিবার দুপুরে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে কমিশন। একইদিন বিকেলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনের সঙ্গেও ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। সেখানে দল দুটির নেতারা ভোটের আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট করার পক্ষে নিজ নিজ যুক্তি তুলে ধরেন। পাশাপাশি উচ্চকক্ষে পিআর চালুর বিষয়ে শক্ত মনোভাব জানান তারা।

এনসিপির যুগ্ম-আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, 'উচ্চকক্ষে পিআর এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটসহ মৌলিক বিষয়ে যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের স্পষ্ট পদ্ধতি না থাকে তাহলে অনেকে স্বাক্ষর করবে না। কমিশন এ বিষয়ে দলগুলোর সঙ্গে নানাভাবে কাজ করছে। আশা করছি দুই-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে ইতিবাচক ফলাফল আসবে।'

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। দুই দফায় কমিশন প্রথম পর্বে ৩৩টি এবং দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দলের সঙ্গে ৬৭টি বৈঠক করে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট প্রস্তাবের বিষয়ে দলগুলোর কাছে লিখিত মতামত চেয়েছিল কমিশন। দুই পর্বের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য হয়। এই ৮৫টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ।

তার মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে বড় দল বিএনপির নোট ডিসেন্ট দেওয়া নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয় ছোট দলগুলোতে। যার একটি হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উভয়পক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন এবং অপরটি জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির প্রক্রিয়া।

ঐকমত্য কমিশনের গত ৮ অক্টোবর ছিল সবশেষ বৈঠক। ওই বৈঠকে জুলাই সনদের বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়া নিয়ে দলগুলো গণভোটের বিষয়ে একমত হয়। যদিও গণভোট কবে তা নিয়ে দলগুলোতে ভিন্নমত রয়েছে।

গণভোটের বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট চেয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট চেয়েছে।

এছাড়া জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ ৭ টি দল উভয়কক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নসহ যে ৫ দফা দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। গত রোববারও এসব দল সারা দেশে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের দাবি বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে।

তারপরও এসব দলের একাধিক সূত্র বলছে, যদি উচ্চকক্ষে পিআর চালুর বিষয়ে বিএনপির দেওয়া নোট অব ডিসেন্ট প্রত্যাহার করা হয় তাহলে জামায়াত ও এনসিপিসহ দলগুলো অন্য দাবির বিষয়ে নমনীয় হবে।

দুদিন পেছানোর পর আগামী শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই অনুষ্ঠানে জুলাই সনদে কী কী বিষয় সন্নিবেশিত থাকবে এবং বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া কমিশন প্রধান উপদেষ্টাকে দেবেন।

একাধিক সূত্র বলছে, জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল উচ্চকক্ষে পিআর এবং জুলাই সনদে বাস্তবায়নে গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে ব্যবস্থা না করলে স্বাক্ষর করবে না। দলগুলোর নেতাদের বক্তব্যে যা স্পষ্ট। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, 'এতো মানুষের জীবনদানের পর আমরা জুলাই সনদের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়। সেখানে মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নের স্পষ্ট প্রক্রিয়া আমরা দেখতে পারবো বলে আশা করছি। যদি এর বিপরীত কিছু দেখি তখন ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলগুলো।'

ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলছেন, 'দীর্ঘ পরিশ্রমের পর যদি একটি দলের মতামত প্রতিফলন হয় তবে আমরা সনদে স্বাক্ষর করবো না।' দলগুলোর এখনো পর্যন্ত স্পষ্ট বিভাজনে শেষ পর্যন্ত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঝুলে গেলে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংকট তৈরি হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে। যদিও শেষ পর্যন্ত দলগুলোও ঐকমত্যে আসতে চেষ্টা করছে।

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

জুলাই সনদ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর