
- নিয়মিত হালনাগাদ হয় না তথ্য
- আপডেট হয় না শিক্ষক ও দপ্তরপ্রধানদের তথ্য
- অনলাইন ফলাফলের সুযোগ নেই শিক্ষার্থীদের
- বিভাগের কোর্স সংখ্যা, নোটিশ ও ক্লাস রুটিন পেজ শূন্য
প্রযুক্তির আধুনিকতায় আমূল পরিবর্তন এসেছে শিক্ষা ব্যবস্থায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে ওয়েবসাইট। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে অনুষদ, বিভাগ ও ইনস্টিটিউট সম্পর্কিত সকল তথ্যের নির্ভরযোগ্য সূত্র এই সাইট। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে চিত্রটি ভিন্ন। নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ হয় না বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে। ফলে যথাযথ তথ্যসেবা পায় না শিক্ষার্থীরা। তথ্য হালনাগাদ না থাকায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন র্যাংকিংয়েও পিছিয়ে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১৬ জুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডোমেইন jnu.ac.bd নেওয়া হয়, যা দিয়ে ২০২৯ সালের ১৪ জুন পর্যন্ত কাজ করা যাবে। তবে অব্যবস্থাপনায় তথ্য সংকট এখন প্রকট।
ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বিভাগের নোটিশ, ক্লাস রুটিন এবং প্রোগ্রাম (কতটি কোর্স ও কোর্সের শিরোনাম) নামে পেজ রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি বিভাগ ও ১টি ইনস্টিটিউটের এসব তথ্যের জায়গা অসম্পূর্ণ— যা মোট বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের প্রায় ৪৮ শতাংশ। কিছু বিভাগের তথ্য আপলোড করা হলেও সেখানে পরিপূর্ণ তথ্য নেই।
ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম, ম্যানেজমেন্ট, বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইসলামিক স্টাডিজ, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন, সংগীত, থিয়েটার, ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং, প্রিন্টমেকিং, ত্রিমাত্রিক শিল্প ও নকশা, প্রাণিবিদ্যা, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের বর্ষভিত্তিক কোর্সের সংখ্যা, শিরোনাম কিংবা একাডেমিক ক্যালেন্ডারের তথ্য নেই। হাতে গোনা কিছু বিভাগের তথ্য আপলোড করা থাকলেও তা অন্তত এক বছর আগের। বাংলা বিভাগের নোটিশ অপশনে গিয়ে দেখা যায়, গত বছরের অক্টোবর মাসে সর্বশেষ নোটিশ আপলোড করা হয়েছে।
একই অবস্থা শিক্ষক পোর্টালগুলোরও। প্রতিটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের আলাদা স্ট্রাকচার রয়েছে। সেখানে একাডেমিক যোগ্যতা, ব্যক্তিগত সিভি ও অভিজ্ঞতার জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে। অনেকের ছবিও নেই। একাধিক বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ও পরিচালকের তথ্য অনুপস্থিত। অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকদের অভিজ্ঞতা ও গবেষণাসহ অন্যান্য তথ্য আপলোডের অপশন থাকলেও তা করা হয়নি।
অনুষদভিত্তিক ডিন, বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি একমাত্র ছাত্রী হলের পোর্টালেও তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরীরাণী হলের ইতিহাস, হাউজ টিউটর সম্পর্কিত তথ্য আপলোড করা হয়নি। এছাড়াও পরিবহন পুল, মেডিকেল সেন্টার, ক্যাফেটেরিয়া, বৃত্তি, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, কাউন্সেলিং সেন্টার ও ছাত্র কল্যাণের তথ্যেও ঘাটতি রয়েছে। এসব পৃষ্ঠায় নোটিশ, সেবা, সেমিনার ও কর্মশালাসহ অন্যান্য বিষয়ের তথ্য হালনাগাদ নয়।
ওয়েবসাইটে অনেক শিক্ষকের তথ্য অনুপস্থিত। এমনকি ওয়েবসাইটে তথ্য আছে কিনা, সে বিষয়েও অনেক শিক্ষক অবগত নন। আবার কারও পূর্বে আপলোড করা তথ্যও এখন মুছে গেছে। শিক্ষকরা বলছেন, আইসিটি সেলের ওয়েবসাইট আপগ্রেডের পর পুরনো তথ্য মুছে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘এটা নিজেরা করি না, আইসিটি সেল থেকে করে। এ বিষয়ে আমার তেমন ধারণা নেই। তথ্য আপলোড করা জরুরি, হয়তো জরুরি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রোফাইল আপডেট থাকা উচিত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু আমি খেয়াল করিনি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘কিছুদিন আগেও চেষ্টা করেছি, কিন্তু তখন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাচ্ছিল না। এখন যাচ্ছে। খুব শিগগিরই তথ্য আপলোড করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রত্যেক শিক্ষকের নিজস্ব তথ্য থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।’
শিক্ষার্থী পোর্টালেও নিয়মিত হালনাগাদ হয় না তথ্য। পোর্টালে কোর্স হিস্ট্রি ও রেজাল্টসহ পাঁচটি অপশন রয়েছে। কিন্তু কোর্স হিস্ট্রিতে দেখা যায়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে অবস্থান করছেন। পরীক্ষার ফলাফলও প্রকাশ করা হয় অফলাইন নোটিশের মাধ্যমে— নেই অনলাইন ফলাফল দেখার সুযোগ।
রাজধানীতে অবস্থিত দেশের শীর্ষস্থানীয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট আন্তর্জাতিক মানের নয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরপরই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে গণ্য করা হয়। কিন্তু ওয়েবসাইটটি আন্তর্জাতিক মানের না হওয়ায় গুগলে সার্চ করলে সেরা ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও নাম আসে না জবির।’
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহন খোন্দকার বলেন, ‘আমি বর্তমানে প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারে পড়ছি, কিন্তু ওয়েবসাইটে এখনও প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টার দেখায়। এটা অনেক বিভ্রান্তিকর। অনলাইনে রেজাল্ট দেখা গেলে আমাদের সময় ও ঝামেলা দুটোই বাঁচত।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে আমাদের পরিচয় ও প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষিত না থাকা দুঃখজনক। একাডেমিক রেজাল্ট, রুটিন ও একাডেমিক ক্যালেন্ডারের অপশন থাকলেও সেখানে কিছুই নেই। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে এটা সত্যিই হতাশাজনক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের কম্পিউটার প্রোগ্রামার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতিটি বিভাগের আলাদা স্ট্রাকচার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যারা তথ্য ইনপুট করেন, সেগুলো তাদের হাতে। আমরা ওয়েবসাইট আপডেট রাখার চেষ্টা করছি।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এগুলো তো আমাদের হাতে নেই। আমরা শিক্ষকদের একাধিকবার প্রোফাইল আপডেট করতে বলেছি, কিন্তু অনেকে করেননি।’
অনলাইনে ফলাফল প্রদর্শনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ফলাফলের বিষয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের অধীনে। ওয়েবসাইটে রেজাল্ট নামে পেজ খোলা আছে। নিয়ন্ত্রক দপ্তরের অনুমোদন পেলে আমরা এটি চালু করতে পারি।’
এমএইচএস