জকসু নির্বাচনে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক, স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:০০
					জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের খসড়া আচরণবিধি প্রকাশ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে জকসুর নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই আচরণবিধি প্রকাশিত হয়। এতে প্রার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে ডোপ টেস্ট করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
বিধিমালার ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘কমিশন প্রত্যেক প্রার্থীর ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্তি পরীক্ষা করবেন। মাদকাসক্ত প্রমাণিত হলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। কেউ ডোপ টেস্টে অনুপস্থিত থাকলে তার মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে।’
নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা স্বাগত জানিয়েছেন। তারা এটিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সামি মাহমুদ বলেন, ‘ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত প্রশংসনীয়। নেতৃত্ব যাদের হাতে থাকবে তারা মাদকমুক্ত কিনা তা যাচাই করা জরুরি। এতে ক্যাম্পাস মাদকমুক্ত হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগোবে।’
একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী তুষার জোয়ার্দার বলেন, ‘এটি শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ প্রতিযোগিতা ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে। ছাত্র প্রতিনিধিদের মানসিকভাবে দৃঢ় ও চরিত্রবান হওয়া জরুরি। এই উদ্যোগ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যও দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।’
জাহিদ হাসান পারভেজ বলেন, ‘আমরা চাই না কোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হোক। তাই এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী।’
শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহান প্রামাণিক বলেন, ‘ডোপ টেস্ট শিক্ষাঙ্গনের রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এটি নৈতিক ও আদর্শ নেতৃত্ব গঠনে সহায়তা করবে এবং রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা ঘটাবে।’
সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত অত্যাধুনিক চিন্তার ফল। একজন মাদকাসক্ত শিক্ষার্থী কখনোই নিজের সীমা বুঝে না। এই পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের সনাক্ত করা নেতৃত্ব ও ব্যক্তিজীবন উভয়ের জন্যই প্রয়োজনীয়।’
শাখা ছাত্র শিবিরের বাইতুল মাল সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দিতে হলে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সহায়ক হবে।’
জকসুতে পদপ্রার্থী ও আবৃত্তি সংসদের সভাপতি আতিক মেজবাহ লগ্ন বলেন, ‘ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক মনে হয়েছে। তবে ফলাফলে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা জরুরি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের আগে ডোপ টেস্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। যথাযথ তৎপরতা নেওয়া প্রয়োজন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রঙ্গভূমির সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তাকরিম আহমেদ বলেন, ‘আমরা যদি মাদকমুক্ত, সচেতন প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই, তাহলে আমাদেরই তার উদাহরণ হতে হবে। ডোপ টেস্ট শুধু যাচাই নয়, এটি একটি প্রতিশ্রুতি যে আমরা সৎভাবে, পরিষ্কার মানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করতে চাই। আশা করি এই ধারা স্থায়ীভাবে বজায় থাকবে এবং সব প্রার্থী এতে অংশগ্রহণ করবে।’
ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের সংগঠক তাওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যারা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করবে, তারা যদি মাদকাসক্ত হয়, তাহলে তারা শিক্ষার্থীদের কীভাবে প্রতিনিধিত্ব করবে? এই সিদ্ধান্ত যৌক্তিক এবং প্রশাসনের কাছে আশা করি এটি যথাযথভাবে প্রয়োগ হবে।’
শাখা ছাত্র শিবিরের অফিস সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘জকসু নির্বাচনে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা নিঃসন্দেহে সাহসী, ইতিবাচক ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি তার হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারবে এবং নির্বাচিত নেতারা দায়িত্ব নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালন করতে পারবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি মো. ছোলায়মান খান বলেন, ‘ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত একটি সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এটি শুধুই নির্বাচনের নিয়ম নয়, বরং মাদকমুক্ত, সচেতন ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব গড়ে তোলার বার্তা। ভবিষ্যতের নেতাদের মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নৈতিক মূল্যবোধের সংস্কৃতি তৈরি করবে।’
ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি মাঈন আল মুবাশ্বির বলেন, ‘ডোপ টেস্ট করার সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারো মাদক গ্রহণের অভ্যাস আছে কিনা বা অতি মাত্রায় মাদক সেবন করে কিনা তা জানা জরুরি। একজন প্রার্থীর বিষয়ে সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন।’
শাখা ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। চাই আমাদের জকসুর প্রার্থীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও দায়িত্বশীল হোক। এতে ছাত্র সমাজে ইতিবাচক ও নৈতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।’
প্রার্থী নির্ধারণে মাদকাসক্তি পরীক্ষা চালু করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকবিরোধী মানসিকতা ও সচেতনতা তৈরি হবে। তারা বুঝবে যে মাদক গ্রহণ শুধু শরীরের ক্ষতি নয়, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও সুযোগ হারানোর কারণও হতে পারে।
শাখা ছাত্র দলের আহ্বায়ক সদস্য আবু বকর খান বলেন, ‘জকসু প্রার্থীদের জন্য ডোপ টেস্টের উদ্যোগ ব্যক্তিগতভাবে স্বাগত। আমি চাই সুস্থ, স্বাভাবিক ও পরিষ্কার মস্তিষ্কের ব্যক্তি নির্বাচিত হোক, কোনো মাদকাসক্ত নেশাগ্রস্থ ব্যক্তি আসুক না।’
শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুপান্তি রত্না বলেন, ‘ডোপ টেস্ট সমাজে সততা, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমরা চাই তরুণ প্রজন্ম মাদকে না বলুক। বাস্তবে শিক্ষিত তরুণ সমাজের অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। তাই ডোপ টেস্ট চালু রাখলে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। প্রার্থীরা ডোপ টেস্টের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারবে তারা মাদকে ‘না’ বলছে।’
জকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, ‘রোববার আমাদের একটি সভা আছে। আমাদের নির্বাচন হবে পরিচ্ছন্ন। ডোপ টেস্টের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। এখনও নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। সব বিষয় চিন্তাভাবনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। শিক্ষার্থীদের একটি সুন্দর জকসু উপহার দিতে চাই।’
এমএইচএস


			