ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন : ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভোটকেন্দ্রে থাকবে যৌথবাহিনী
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২০:৫৩
গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটকেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসংখ্যা, মোতায়েনের সময়কাল ও কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা শিগগিরই কমিশনের সভায় চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভোটকেন্দ্রগুলোতে যৌথবাহিনীর উপস্থিতি থাকবে।
ভোটের তফসিল ঘোষণার আর মাত্র এক মাস বাকি। ইতোমধ্যে বিএনপি, জামায়াত, নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ বিভিন্ন দল প্রার্থী ঘোষণার তোড়জোড় শুরু করেছে। ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও প্রচারাভিযান শুরু করেছে। এদিকে নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবিধানিক সংস্থা ইসি চূড়ান্ত প্রস্তুতির শেষ ধাপে রয়েছে।
ইসির প্রাথমিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এবার প্রায় ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮,২২৬টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, ২০,৪৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৩,৪০০টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। ঝুঁকি নির্ধারণে কেন্দ্রের অবস্থান, থানার দূরত্ব, ভৌত অবকাঠামো, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিকটবর্তীতা, সীমান্তবর্তী বা পাহাড়ি এলাকা, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চল-সব দিক বিবেচনা করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, `ফাইনাল ম্যাপিং এখনও হয়নি। কমিশন সভায় বসে কেন্দ্রগুলোর ঝুঁকির স্তর ও নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।'
আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রস্তাব অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে প্রায় সাত লাখের বেশি নিরাপত্তা সদস্য মাঠে থাকবে। তারা তিন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন-তফসিল ঘোষণার আগে, ভোটের দিন এবং নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে।
আনসার-ভিডিপির প্রায় পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার সদস্য সরাসরি ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বে থাকবেন। পুলিশের প্রায় এক লাখ ৪১ হাজার সদস্যের মধ্যে ৪৭ হাজার ভোটকেন্দ্রে মোতায়েন থাকবে। র্যাবের প্রায় ৫ হাজার ৫০০ সদস্য মোবাইল টিম হিসেবে কাজ করবে, প্রয়োজনে ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হবে। বিজিবির ৪৯২ উপজেলায় ১১ হাজার ৬০ প্লাটুন সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। সেনাবাহিনীর ৯০ হাজার থেকে এক লাখ সদস্য দায়িত্বে থাকবে; প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কোম্পানি মোতায়েন করা হবে। নৌবাহিনীর তিন হাজার সদস্য উপকূলীয় জেলায় দায়িত্ব পালন করবেন, কোস্টগার্ডের আরও তিন হাজার সদস্য থাকবে ৯ জেলার ১৭ উপজেলায়। বিমানবাহিনীর প্রায় দেড় হাজার সদস্য নির্বাচনি মালামাল পরিবহন ও আকাশপথে নজরদারিতে থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গত জুলাইয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, `যেখানে ঝুঁকি বেশি, সেখানে বাহিনীগুলোর যৌথ উপস্থিতি বাড়াতে হবে।'
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, আট লাখের মধ্যে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার আনসার এবং এক লাখ ৪১ হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্বে থাকবেন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করতে পুলিশের বডি ক্যাম ব্যবহারের নির্দেশ এবং সব কেন্দ্রকে সিসিটিভির আওতায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের বৈঠকে আসন্ন নির্বাচনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি পর্যালোচনা হয়। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন যেন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকে-এ বিষয়ে তিন বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনের আগে-পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রাথমিক প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ৪৮ হাজার পুলিশ সদস্য। তফসিল ঘোষণার পর বাহিনী মোতায়েন পরিকল্পনা নিয়ে ফের বৈঠকে বসবে ইসি। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক পরিপত্র জারি করবে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রাথমিক প্রস্তাবনা এসেছে। ভোটের আগে-পরে মোট আট দিন মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রতিটি কেন্দ্রে ১৩ থেকে ১৮ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। নভেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’
তিনি আরও বলেন,‘আমরা চেষ্টা করছি এই মাসের মধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ও নিরাপত্তা পরিকল্পনা নির্ভুলভাবে সাজাতে চূড়ান্ত অনুমোদন কমিশন সভায় দেওয়া হবে।’
- এমআই


