Logo

বিশেষ সংবাদ

শেখ হাসিনার রায় সোমবার

Icon

মাসুম আহম্মেদ

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:০৪

শেখ হাসিনার রায় সোমবার

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেছেন। এ মামলার রায় আগামী ১৭ নভেম্বর, সোমবার ঘোষণা করা হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৯ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই দিন নির্ধারণ করেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

মামলার অপর দুই আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। সাবেক আইজিপি মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদসহ অন্যরা।

মামলায় প্রথম দিকে শেখ হাসিনা একমাত্র আসামি ছিলেন। চলতি বছরের ১৬ মার্চ শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করার আবেদন করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) এবং ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলাটি (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

গত ১ জুন শেখ হাসিনাসহ এই তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এ মামলার একমাত্র গ্রেফতার আসামি। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের দিন (১০ জুলাই) সাবেক আইজিপি মামুন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে রাজসাক্ষীর আবেদন করেন।

গত ৮ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হয় যুক্তিতর্ক। টানা পাঁচ দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ১৬ অক্টোবর প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক শেষ হলে ২০ অক্টোবর থেকে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী টানা তিন দিন শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ২৩ অক্টোবর পাল্টা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন উভয়পক্ষ।

 

তার আগে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান ট্রাইব্যুনালে বলেন, ‘বিচার যত কঠিনই হোক, যত বাধা আসুক; সমস্ত বাধার প্রাচীর ভেঙে যদি বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না হয়, তা হলে আমরা জাতি হিসেবে এগোতে পারব না। চূড়ান্ত যুক্তিতর্কে চিফ প্রসিকিউটর শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন ট্রাইব্যুনালের কাছে।

অন্যদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন দাবি করেন, তার মক্কেলরা নির্দোষ, তারা রায়ে খালাস পাবেন। আর শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড চান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। আইনজীবী মো. আমির হোসেন যুক্তিতর্কে এ মামলা থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের খালাস আবেদন করেন। রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনেরও খালাস আবেদন করেন তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

পতিত সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে দাবি করে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা দেয়, এই অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা হবে। সে অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল, প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল গত বছরের ১৭ অক্টোবর দুই মামলার বিষয়ে প্রথম শুনানি হয়। সেদিন প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গত বছরের ১৪ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়। পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে আত্মসমর্পণ করতে ১৬ জুন সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিলে পরদিন দুটি জাতীয় সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

আত্মসমর্পণ না করায় তাদের পলাতক দেখিয়ে গত ১০ জুলাই মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী মো. আমির হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই দিন আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এ মামলার রাজসাক্ষী হতে ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেন। পরে তার আবেদন মঞ্জুর করা হয়। গত ৩ আগস্ট চিফ প্রসিকিউটরের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দিয়ে শুরু হয় বিচারকাজ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাক্ষ্য দেন এ মামলায়। রাজসাক্ষী হিসেবে গত ২ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দেন আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী মামুন।

এদিকে,এ মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দৃঢ়তার সঙ্গে রুখে দেবে বলে মনে করেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

যে পাঁচ অভিযোগে হাসিনার বিচার: আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো- উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান: ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সমর্থকরা ব্যাপক হামলায় জড়িত হয় বলে অভিযোগ। এতে বহু নিরীহ ছাত্র ও সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।

প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ: অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সেই নির্দেশ বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেন।

আবু সাঈদ হত্যা: ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তিন আসামিকেই অভিযুক্ত করা হয়েছে।

চানখাঁরপুলে ছয় হত্যা: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ছয়জন নিহত হন। এ ঘটনাতেও শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

আশুলিয়ায় ছয় হত্যা ও লাশ পোড়ানো: একই দিন আশুলিয়া এলাকায় ৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের লাশ পুড়িয়ে দেয়া হয়, আরেক আহত ব্যক্তিকেও আগুনে পোড়ানো হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। শেখ হাসিনা খালাস পাবেন, আশা রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর: এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সকল আসামি খালাস পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। গতকাল রায়ের তারিখ ঘোষণার পর এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

শেখ হাসিনা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর