Logo

বিশেষ সংবাদ

নির্বাচনী মাঠে শঙ্কিত সম্ভাব্য প্রার্থীরা

Icon

এম. ইসলাম

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৬

নির্বাচনী মাঠে শঙ্কিত সম্ভাব্য প্রার্থীরা

তফসিলের পর এবার নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম শঙ্কায় রয়েছেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা। নিরপেক্ষ প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। 

এদিকে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে সব সংশয়ের অবসান পেছনে ফেলে এখন ভোটের দিনক্ষণ গণনা চলছে। সারা দেশে ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোটও চাইছেন প্রার্থীরা। কিন্তু শুক্রবার রাজধানীতে দিনে দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র জুলাই আন্দোলনের নেতা ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় প্রার্থীদের মাঝে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

অবশ্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা নিয়ে তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই ছোট রাজনৈতিক দলের নেতারা অভিযোগ করে আসছিলেন। তাদের আশা ছিল, তফসিলের পর হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। কিন্তু তফসিলের ঠিক পরদিন শরিফ ওসমান হাদী গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় প্রার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। 

গতকাল শনিবার বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে তিন দলের শীর্ষ নেতারা প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা যারা এখনো টকশোসহ নানা মাধ্যমে ফ্যাসিস্টের পক্ষ নিয়ে দেশ অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের ব্যাপারেও পদক্ষেপ চেয়েছেন। তারা মনে করছেন, এ ধরনের হামলা নির্বাচন বানচাল করতে বিশেষ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। 

ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা উদ্বিগ্ন। কেউ আবার বিষষটি ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে শুক্রবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে ওসমান হাদীকে গুলি করা হয়েছে। এটি বিশেষ ষড়যন্ত্র। যা দেশের মানুষ রুখে দিবে।’

জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল ও দলটির খুলনা-৫ (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মিয়া গোলাম পরওয়ার দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘তফসিলের পরদিন দিনের বেলায় ওসমান হাদীকে গুলি করার পর সারা দেশের প্রার্থীদের মাঝে উদ্বেগ কাজ করছে। উৎসবমুখর পরিবেশের বিপরীতে শঙ্কার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আশরাফুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচনের আগে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে। অনেক অপরাধী রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থাকে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। সর্বোচ্চ অভিযানের পাশাপাশি সতর্কতা নিয়ে প্রশাসন ভূমিকা পালন করলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।’ 

এদিকে, তফসিল অনুযায়ী আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে ১২ থেকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র কেনা ও জমা দিতে হবে। 

অর্থাৎ রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীদের হাতে খুব একটা সময় নেই। তাই রাজনৈতিক দলগুলোতে শেষ সময়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতসহ দলগুলো নির্বাচনী ইশহেতার ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে: তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেছেন বিএনপি, জামায়াত ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশিরভাগ দলের প্রার্থীরা। প্রার্থীদের অনেকে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট কামনা করছেন। পাশাপাশি তারা এলাকাভিত্তিক নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। 

বিএনপির প্রার্থীদের বেশির ভাগ জোর দিচ্ছেন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেকারত্ব দূরীকরণে। এছাড়া দলটি ক্ষমতায় গেলে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে দেশ গড়ার। জামায়াত প্রচারণা চালাচ্ছে, তারা বলছে ক্ষমতায় গেলে দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যবস্থা করবে দলটি। পাশাপাশি জুলাই আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার করতে চায় দলটি। 

আর এনসিপি চায় নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে। তারা প্রতিশ্রæতি দিচ্ছে, গতানুগতিক দলগুলো আগে যেভাবে দেশ শাসন করেছে সেভাবে তারা দেশ চালাবে না। এবার দেশে নতুন বন্দোবস্ত চালু করা হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন করবে দলটি। 

তবে, ব্যতিক্রম দেখা গেছে জাতীয় পার্টির (জাপা) ক্ষেত্রে। দলটি এখনো কোনো নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শুরু করেনি। যদিও দলটি প্রার্থী বাছাই করছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে সহায়তাকারী হিসেবে দলটি এখনো চাপে রয়েছে। 

আচরণ বিধি মানছেন না প্রার্থীরা: তফসিলের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও আচরণ বিধি মেনে প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার সরিয়ে ফেলতে ইসির নির্দেশনা থাকলেও তা খুব একটা কাজে আসেনি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তাদের আগাম প্রচার-প্রচারণায় ব্যবহৃত ব্যানার ফেস্টুন সরানোর কথা থাকলেও হাতেগোনা কিছু সংখ্যক প্রার্থী সেই নির্দেশনা মেনেছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজধানী থেকে শুরু করে সারা দেশেই দেখা গেছে, প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার এখনো ঝুলছে।

প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত ও ইশতেহার তৈরিতে ব্যস্ত শীর্ষ নেতারা: দলগুলোর একাধিক সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে বিএনপির ঘোষিত ২৭২ আসনের প্রার্থীরা এখন ভোটের মাঠে। অবশিষ্ট ২৮ আসনে শরিকদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশের কথা ভাবছেন দলটির নেতারা। দলটির কাছ থেকে কাক্সিক্ষত আসন না পেয়ে ক্ষুব্ধ মিত্রদের সামাল দিতে বেশ সক্রিয় এখন বিএনপি।

জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের সমমনা ৮ দল চলতি সপ্তাহের প্রথম ভাগে সমন্বিত প্রার্থী তালিকা প্রকাশে কাজ করছে জোরেশোরে। যদিও দলগুলোর নিজস্ব প্রার্থী বেশ আগে থেকেই মাঠে রয়েছেন। এনসিপি ১২৫ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। বাকি আসন প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দিনরাত দলটির শীর্ষ নেতারা কাজ করছেন।

পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াত এবং এনসিপিসহ দলগুলো নির্বাচনী ইশহেতার ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোন কোন বিষয়কে তারা নির্বাচনে ভোটারদের কাছে আনবেন সেটি নিয়ে দলগুলোর নীতিনির্ধারকরা কাজ করছেন।

বিকেপি/এমবি

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

সংসদ নির্বাচন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর