Logo

রাজনীতি

নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ২০:৫৮

নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) নির্বাচন ভবনে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ রোডম্যাপ প্রকাশ করেন। নির্বাচনী রোডম্যাপে আগামী ফেব্রুয়ারিতে রমাজানের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সকল প্রস্তুতি সেরে নেবে এ সময়ে। রোডম্যাপ প্রকাশের পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

ইসির নির্বাচনী রোডম্যাপে ‌খুশি বিএনপি

ইসির ঘোষিত এই রোডম্যাপকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেছেন, দেশের সমস্যা সমাধানে নির্বাচন দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যারা নির্বাচনে বাধা দেওয়া কিংবা বর্জনের মতো হটকারী সিদ্ধান্ত নেবে তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

এবারের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আগেও সহযোগিতা করেছে, সামনেও সব ধরনের সহায়তা করবে। 

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিকেলে বনানীতে এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা অবশ্যই পুরো জাতির জন্য একটি সুসংবাদ। মানুষ এখন নির্বাচনমুখী হতে পারবে। সবাই অপেক্ষা করছে- দেশে একটা নির্বাচন হোক এবং এর মাধ্যমে দেশে একটা নির্বাচিত সরকার আসবে, সংসদ প্রতিষ্ঠা হবে। সে সরকার বা সংসদ জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহি থাকবে। নির্বাচনের পর আমাদের অর্থনীতি বড় আকারে ঘুরে দাঁড়াবে, গুড স্কিল ডেভেলপমেন্ট হবে।’

আরেক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণায় জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এই বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। যথাযথ সময়ে রোডম্যাপটি ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের দিক থেকেও একই রকম নির্দেশনা ছিল। এখন রোডম্যাপ অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়া হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

সমালোচনা করল জামায়াত

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের সদ্য ঘোষিত রোডম্যাপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এই মুহূর্তেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী- এমন দাবি করে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, নির্বাচন পদ্ধতি ও সংস্কার নিয়ে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সন্নিবেশিত করে রোডম্যাপ ঘোষণা করলে সেটি উত্তম হতো। 

একটি রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তাহের বলেন, সংস্কার নিয়ে দেশে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, সংস্কার ও বিচার দৃশ্যমান হওয়ার আগে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।

আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আরও বলেন, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের ঘোষণা ছিল প্রধান উপদেষ্টার। অথচ প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার ও বিচারের দৃশ্যমান রূপ না দিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি যে রোডম্যাপ দিয়েছেন, সেই রোডম্যাপেই নির্বাচন হতে পারে। এতে জামায়াতের কোনো আপত্তি নাই। তবে অবশ্যই নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই আলোকে গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। তারপর পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সংসদ ও সরকার গঠন করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে জনগণ দাবি আদায়ে রাজপথে নেমে আসবে।

ইতিবাচক এনসিপি, জুলাই সনদে গুরুত্ব

ইসি ঘোষিত ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপকে ইতিবাচকভাবে দেখছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে জুলাই সনদ চূড়ান্তের আগে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের সামিল বলে মনে করছে তারুণ্য নির্ভর দলটি।

দলটি এক বিবৃতিতে বলেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল বিচার ও সংস্কার। সেই লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করে, যেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো জাতীয় নাগরিক পার্টিও নিজেদের মতামত তুলে ধরে। এই সংস্কার কার্যক্রম চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ঐকমত্য কমিশন প্রণীত জুলাই সনদের খসড়া কিছুদিন আগে আমাদের কাছে এসে পৌঁছায় এবং এ বিষয়ে আমরা আমাদের মতামত তুলে ধরে তা কমিশনের কাছে জমা দিয়েছি। যদিও জুলাই সনদের খসড়ায় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো রোডম্যাপ না থাকা আমাদের হতাশ করেছে।

এনসিপি আরও বলেছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ৬টি উপায় নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে মতামত পাওয়া গেছে, যার মধ্যে আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। অন্যান্য দলের প্রস্তাবে গণভোট ও সংবিধান সংস্কার সভাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব রয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করা হবে, তার সাথে নির্বাচনী প্রস্তুতির সম্পর্ক রয়েছে। এই আলোচনা চলাকালেই প্রধান উপদেষ্টার একপাক্ষিকভাবে নির্বাচনের সময় ঘোষণা আমাদের হতবাক করলেও, বৃহত্তর স্বার্থে আমরা তা মেনে নিয়েছিলাম। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, ২০২৬ সালের পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা আশা করেছিলাম, এর নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশের পূর্বেই সরকার সংস্কার বিষয়ক পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জনের রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে। কিন্তু আমরা হতাশার সাথে লক্ষ্য করছি, অজানা কারণে ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী দফার বৈঠক পেছানো হয়েছে এবং এখনো জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার উপায় নির্ধারণ হয়নি। জুলাই সনদ চূড়ান্ত না করে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত না হয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের সামিল।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন এই রোডম্যাপ অনুমোদন করে। ২৪টি কাজের পরিকল্পনার মধ্যে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপের কথাও রয়েছে।

সংলাপ, মতবিনিময়, মিটিং, ব্রিফিং, প্রশিক্ষণ, মুদ্রণ, বাজেট বরাদ্দ, আইটিভিত্তিক প্রস্তুতি, প্রচারণা, সমন্বয় সেল, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক থেকে যাবতীয় কর্মপরিকল্পনা মাথায় রেখে উল্লেখযোগ্য খাত ও বাস্তবায়নসূচি রোডম্যাপে স্থান পেয়েছে।

এসআইবি/এইচকে 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর