ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের শুরু থেকে শেষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ১৩:১৫
-684e72f68ade6.jpg)
দীর্ঘ উত্তেজনা, গুপ্তহত্যা আর হুমকির পর অবশেষে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরবৈরী শক্তি—ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও অবৈধ দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েল। গত ১৩ জুন রাত ৩টায় ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে ইরানের অভ্যন্তরে একযোগে ভয়াবহ বিমান ও ড্রোন হামলা চালায়। হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি ও বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কেন্দ্রগুলো।
ইসরায়েলের দাবি, এটি ছিল ‘প্রতিরক্ষামূলক আক্রমণ’। কিন্তু বাস্তবে এটি ছিল আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। তেহরান একে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে অভিহিত করে প্রতিশোধের শপথ নেয় এবং কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ নামের অভিযানের মাধ্যমে ইরান এর পাল্টা জবাব দেয়। ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনে হামলা চালানো হয় ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিব, হাইফা ও দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক ঘাঁটিগুলোতে।
ইসরাইলের প্রথম ধাক্কায় ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় ইসফাহান, নাতান্জ এবং খুজেস্তান প্রদেশে পরমাণু গবেষণাগার, ড্রোন উৎপাদন কেন্দ্র ও গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটে। শহীদ হন আইআরজিসির ছয় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং দুইজন পরমাণু বিজ্ঞানী। ইরানের পক্ষ থেকে নিহতদের মধ্যে জেনারেল আমীর আলি হাজিজাদেহ, আলি শামখানি ও হোসেইন সালামির নাম নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান গভীর রাতে এক বার্তায় বলেন, ‘ইসরায়েল আগুন নিয়ে খেলেছে, এর মূল্য তাকে চোকাতেই হবে।’ সেনাবাহিনী ও বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে ‘পূর্ণমাত্রায়’ জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ইরান তার প্রতিক্রিয়ায় অভাবনীয় গতি ও কৌশল প্রদর্শন করে। রাজধানী তেহরান, হামদান ও খোরামশহর থেকে ছোঁড়া ডজনাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সশস্ত্র ড্রোন ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থলে আঘাত হানে। হামলায় তেলআবিবে একটি সামরিক কমান্ড সেন্টার এবং দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি রাডার ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আরও পড়ুন—হরমুজ প্রণালী বন্ধ করতে পারে ইরান, জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত অন্তত ৮ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্কেও সমস্যা তৈরি হয়েছে।
ইরানে এখন পর্যন্ত মোট কতজন নিহত হয়েছেন, তার নির্দিষ্ট সংখ্যা জানা না গেলেও সর্বশেষ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশটির নিহতের সংখ্যা ১০৪ জন, আহত কয়েকশত। তবে নির্ভরযোগ্য তথ্য হলো- ৭৮ জন নিহত হয়েছেন এদের মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞানী, সামরিক কর্মকর্তা ও বেসামরিক নাগরিক। বিশেষত দক্ষিণ ইরানের ‘সাউথ পার্স’ গ্যাসক্ষেত্রে একাধিক বিস্ফোরণে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। হরমুজ প্রণালীসংলগ্ন অঞ্চলেও জাহাজ চলাচলে সাময়িক ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
অন্যদিকে ইরান যে প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে, তাতে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিমানবন্দর, সামরিক ঘাঁটি এবং প্রযুক্তিগত কেন্দ্র ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন যুদ্ধ শুরুর পরপরই ইসরায়েলকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ‘আমরা ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করি।’ কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক সদস্য রাষ্ট্র উদ্বেগ জানিয়েছে এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
মুসলিম বিশ্বে যুদ্ধের নিন্দা আরও জোরালো। তুরস্ক, কাতার ও মালয়েশিয়া একে এ যুদ্ধকে ‘বিধ্বংসী’ আখ্যা দিয়ে তা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। পাকিস্তানও ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে।
১৫ জুন সকাল পর্যন্ত যুদ্ধ থামেনি। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী- আকাশে এখনো ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র উড়ছে। হিজবুল্লাহ, হুথি এবং সিরিয়াভিত্তিক প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো উত্তেজনার দিকে চোখ রাখছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনী বলেছেন, ‘এই যুদ্ধ দখলদার রাষ্ট্রের পতনের সূচনা। তাদের জন্য ভয়াবহ প্রতিষোধ অপেক্ষা করছে।’
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি একটি সীমিত যুদ্ধ না থেকে ‘পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক সংঘর্ষ’-এ রূপ নিতে পারে, যার পরিণাম গোটা বিশ্বের জন্যই ভয়ঙ্কর হবে।
প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন
সম্পর্কিত
পঠিত
মন্তব্য করুন