Logo

অর্থনীতি

একীভূত ব্যাংকগুলোর বোর্ড নিয়ে ধোঁয়াশা, দুশ্চিন্তায় আমানতকারীরা

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:৫৩

একীভূত ব্যাংকগুলোর বোর্ড নিয়ে ধোঁয়াশা, দুশ্চিন্তায় আমানতকারীরা

বাংলাদেশের আর্থিক খাতে দুর্বলতা, সুশাসনের অভাব এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপের কারণে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে, প্রত্যেক ব্যাংকে পাঁচজন প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে, এই পরিবর্তনের পর ব্যাংকগুলোর বোর্ডের পরিচালকদের কার্যপরিধি নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য বলছে যে, ব্যাংকের বোর্ড থাকবে, তবে এমডিরা প্রশাসকদের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। একই সঙ্গে এসব ব্যাংক নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে নেতিবাচক আলোচনা চলছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক আশ্বস্ত করেছে যে, একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলোর গ্রাহকরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একীভূত হওয়ার ফলে ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে এই একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতের বর্তমান সংকট এবং দুর্বলতাকেও তুলে ধরছে।

চেয়ারম্যানদের ভূমিকা ও ব্যাংক বোর্ড
মুহূর্তে ব্যাংক চেয়ারম্যানদের ভূমিকা কী হবে এবং বোর্ড সদস্যরা কিভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন, জানতে এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের কল করা হলেও, তারা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানান, ‘একীভূত হওয়ার পর যেদিন থেকে ব্যাংকে প্রশাসকরা আসবেন, সেদিন থেকে এমডিরা দায়িত্বে থাকবে না, এমন কিছু নয়। অর্থাৎ যেভাবে কাজ চলছিল, ঠিক তেমনভাবেই চলবে। ব্যাংকগুলোতে নিয়োগ দেওয়া পাঁচ সদস্যের প্রশাসক টিম সেন্ট্রাল টিমের কাছে রিপোর্টিং করবেন। তবে ব্যাংকের বোর্ড ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। অবশ্য কোনো ব্যাংকের বোর্ডই ভাঙা হবে না।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অ্যাক্ট অনুযায়ী, একটি ব্যাংকের মার্জারের সমাপ্তি ঘটলে তার বোর্ড বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’

ব্যাংকের বোর্ড ও প্রশাসকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের আশঙ্কা
অর্থনীতিবিদদের মতে, একীভূত করার প্রক্রিয়ার মধ্যে ব্যাংকের পূর্বের বোর্ড রেখে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ফলে কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। প্রশাসকদের সঙ্গে বোর্ড ও কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে। এর আগেও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদে প্রশাসক নিয়োগের পর কর্মীদের সঙ্গে প্রশাসনের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিল, যা একপর্যায়ে হামলা ও পদত্যাগের ঘটনা ঘটায়।

এ প্রসঙ্গে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো হেলাল আহমেদ জনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কিছুটা আস্থাহীনতা কাজ করলেও দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ব্যাংক একীভূত হলে পরিচালনা পর্ষদও পুনর্গঠন করা উচিত। কেননা এ খাতে শুধু আমানতকারী নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাধারণ বিনিয়োগকারী, শেয়ারহোল্ডার, পরিচালকসহ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সবার আস্থার সংকট দূর করা উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান সংস্কার প্রচেষ্টা সফল করতে হলে সব রিস্ক ও অনিশ্চয়তা দক্ষতার সাথে মোকাবিলা করতে হবে।’

নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, একীভূত হওয়ার আগে পাঁচটি ব্যাংককে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’ নামে লাইসেন্স দেওয়া হবে। এটি সরকারি মূলধনে গড়ে উঠবে এবং পরে ধাপে ধাপে বেসরকারি খাতে শেয়ার বিক্রি করে সরকারের অর্থ ফেরত আনা হবে। বড় আমানতকারীদের শেয়ার নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে এবং ছোট আমানতকারীরা চাইলে সহজেই টাকা তুলে নিতে পারবেন।

সরকারের দায়ভার
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, এই উদ্যোগ মূলত আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, সরকার সম্পূর্ণ দায়ভার নেবে।’

গত ১৬ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বিশেষ সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। সভায় গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান, অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের সচিব এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চারজন ডেপুটি গভর্নর উপস্থিত ছিলেন। সভায় জানানো হয়, একীভূত হওয়া পাঁচ ব্যাংকের ৭০ লাখেরও বেশি আমানতকারী রয়েছে, যাদের আমানতের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা
শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকগুলোর সম্মতির মাধ্যমে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে বিভিন্ন লুটেরা গোষ্ঠীর জালিয়াতির কারণে এসব ব্যাংকের ৪৮ থেকে ৯৮ শতাংশ ঋণ এখন খেলাপি। একীভূত করার জন্য প্রয়োজনীয় ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বেসরকারি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর