
সাফায়েত মেহেদী, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১৭:৫৬

ছবি : বাংলাদেশের খবর
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষ।
তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। স্থানীয়রা বলছেন, অপরিকল্পিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও খাল দখলের কারণেই জলাবদ্ধতা বাড়ছে।
শুক্রবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট ও মিরসরাই পৌর এলাকার নিচু অংশগুলো প্লাবিত হয়। একইভাবে জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, মঘাদিয়া, মায়ানী ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বহু নিচু এলাকা পানির নিচে চলে যায়।
সরকারতালুক, খিলমুরালী, মধ্যম ও দক্ষিণ ওয়াহেদপুর, আবু তোরাব এলাকায়ও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অতিবৃষ্টির কারণে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জোরারগঞ্জ-মুহুরীপ্রজেক্ট, জোরারগঞ্জ-আবুারহাট ও বড়দারোগাহাট-কমরআলী সড়ক।
মিরসরাই পৌরসভার মধ্যম মঘাদিয়া এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে সবকিছু ডুবে গেছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্না করাও সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবছরই এই সময় এলেই এমন পরিস্থিতি হয়।’
সৈদালী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠা এবং খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৈদালী ও আশপাশের এলাকা ডুবে যায়। রান্নাঘরে পানি উঠে যাওয়ায় অনেকের চুলায় আগুন জ্বলেনি।’
মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার সাহাব উদ্দিন জানান, পাহাড়ি ঢলে হাবিব উল্লাহ ভূঁইয়া সড়কের একপাশ ভেঙে গেছে। ‘মাত্র ১৫ দিন আগে এই সড়কে সংস্কারকাজ হয়েছিল, কিন্তু এখন আবার ধসে পড়েছে।’
টাছরা ইউনিয়নের মাওলানা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জোরারগঞ্জ-আবুারহাট সড়কের অংশবিশেষ খালে পড়ে গেছে। দ্রুত সংস্কার না হলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।’
রায়পুর গ্রামের কৃষক জসীম উদ্দিন জানান, ‘আমার এক একর জমির রোপা আমন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ক্ষতি সামলানো কঠিন হবে।’
মৎস্যচাষি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ইছাখার কয়েকটি ঘের থেকে মাছ পানির সঙ্গে ভেসে গেছে। তবে বৃষ্টি থেমে গেলে ক্ষতি অনেকটা এড়ানো সম্ভব।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে রোপা আমন ও কিছু সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বৃষ্টি চলতে থাকলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।’
সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ‘ঘেরগুলোর পাড় নিচু হওয়ায় ভারি বৃষ্টিতে পানি বেরিয়ে যায়। তবে বৃষ্টি থেমে গেলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।’
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোমাইয়া আক্তার বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ৩৬ টন চাল ও ১ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।’
সাফায়েত মেহেদী/এআরএস
প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন
সম্পর্কিত
পঠিত
মন্তব্য করুন